সংঘাত বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে লেবাননের অবনতিশীল নিরাপত্তা পরিস্থিতির কারণে স্বেচ্ছায় দেশে ফিরতে ইচ্ছুক ৬৫ বাংলাদেশি নাগরিকের দ্বিতীয় ব্যাচ আজ সন্ধ্যায় একটি বাণিজ্যিক ফ্লাইটে ঢাকায় পৌঁছাবে।
লেবাননের রাজধানী বৈরুতে বাংলাদেশ দূতাবাসের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দুই নবজাতকসহ মোট ৬৫ জনের দলটি জেদ্দায় ট্রানজিট বিরতির পর বুধবার (২৩ অক্টোবর) সন্ধ্যা ৬টায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করবে।
বাংলাদেশি নাগরিকদের বহনকারী বিমানটি বৈরুতের স্থানীয় সময় মঙ্গলবার রাত ১০টা ৫০ মিনিটে বৈরুত রফিক হারিরি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে রওনা হয়ে স্থানীয় সময় সকাল ৮টা ২০ মিনিটে জেদ্দায় পৌঁছার এবং জেদ্দা থেকে স্থানীয় সময় দুপুর ১টা ২০ মিনিটে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হওয়ার কথা রয়েছে।
এর আগে সোমবার লেবাননে আটকেপড়া ৫৪ জন বাংলাদেশি নাগরিকের প্রথম দলটি ২১ অক্টোবর সোমবার সন্ধ্যায় দেশে ফিরে আসে।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন এর আগে গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, সরকার লেবানন থেকে নথিভুক্ত বাংলাদেশি নাগরিকদের প্রত্যাবাসন শুরু করেছে।
তিনি উল্লেখ করেন, বৈরুত থেকে বহির্গামী ফ্লাইটে পর্যাপ্ত আসন না পাওয়ায় প্রাথমিক পর্যায়ে সীমিত সংখ্যক প্রবাসীকে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে।
তিনি বলেন, সামর্থ্যের সীমাবদ্ধতার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা একটি বড় দলকে সমুদ্রপথে তুরস্কে পাঠানোর বিকল্প অন্বেষণ করছি। সেখান থেকে তারা বিমানে করে বাংলাদেশে ফিরতে পারবেন।
লেবাননে চলমান সংঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত বাংলাদেশিদের নিরাপদে প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করতে ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর মাইগ্রেশন (আইওএম)-এর সঙ্গে অংশীদারত্বের ভিত্তিতে প্রত্যাবাসন প্রচেষ্টা সমন্বয় করা হচ্ছে।
সোমবার আইওএম বাংলাদেশ জানায়, লেবাননে সংঘাত বাড়ার প্রেক্ষিতে আইওএম-ইউএন মাইগ্রেশন ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় লেবানন থেকে বাংলাদেশি নাগরিকদের নিরাপদ প্রত্যাবর্তনে সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা করছে এবং দেশে আগমনের সঙ্গে সঙ্গে তাদের তাৎক্ষণিক চিকিৎসা সহায়তা দিচ্ছে।
লেবাননে সংঘাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আইওএম-ইউএন মাইগ্রেশন সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা করছে। নিরাপদ প্রত্যাবর্তনের সুবিধার্থে এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় লেবানন থেকে আসা বাংলাদেশি নাগরিকদের আগমনের সঙ্গে সঙ্গে তাৎক্ষণিক সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে।
লেবাননে আনুমানিক ৭০ হাজার থেকে এক লাখ বাংলাদেশি নাগরিক রয়েছেন। তবে এর মধ্যে প্রায় ১৮শ জন দেশে ফেরার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
লেবাননে আটকেপড়া বাংলাদেশি নাগরিকদের ফিরিয়ে আনার সুবিধার্থে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে।
এর আগে লেবাননের রাজধানী বৈরুতে বাংলাদেশ দূতাবাস আগ্রহী নাগরিকদের প্রত্যাবাসনের জন্য তালিকাভুক্ত হতে উৎসাহিত করে একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে।
পরে দূতাবাস জানায়, লেবাননে চলমান যুদ্ধপরিস্থিতির কারণে প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে যারা স্বেচ্ছায় দেশে যেতে দূতাবাস বরাবর আবেদন করেছেন এবং যাদের পাসপোর্ট, আকামাসহ আবশ্যক ট্রাভেল ডকুমেন্টস প্রস্তুত রয়েছে, তাদের যাবতীয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে দূতাবাসের ব্যবস্থাপনায় দেশে প্রেরণের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
সোমবার সৌদি এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে লেবানন থেকে প্রথম দফায় ফেরত আসা ৫৪ বাংলাদেশির খোঁজখবর নিতে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যান প্রবাসী কল্যাণ উপদেষ্টা. আসিফ নজরুল।
এ সময় আসিফ নজরুল বলেন, আমরা দেখবো যারা ফিরে আসছেন তাদের পুনর্বাসন করা যায় কি না। লেবাননের পরিস্থিতি ঠিক হলে ওনারা আবার যাবেন। আমরা এখানে ওনাদের ছেড়ে দেবো না। আমরা দেশে অথবা বিদেশে পুনর্বাসনের চেষ্টা করবো।
প্রবাসী কল্যাণ উপদেষ্টা বলেন, লেবাননে আটকেপড়া বাংলাদেশিদের ফিরিয়ে আনতে যত টাকা প্রয়োজন খরচ করা হবে। আইওএম-এর সহায়তায় আমরা সবাইকেই বিনাখরচে নিয়ে আসবো।
আসিফ নজরুল বলেন, রেমিট্যান্স যোদ্ধা যারা দেশে আসছেন আমরা তাদের ভিআইপি সুবিধা দেওয়ার চেষ্টা করছি। প্রবাসীদের এই সেবা দিতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। অচিরেই আমরা প্রবাসীদের জন্য লাউঞ্জ তৈরি করছি, দুই সপ্তাহের মতো লাগবে। আমরা আশা করি বড় অনুষ্ঠান করে উদ্বোধন করতে পারবো।